চতুরাশ্রমের মধ্যে গার্হস্থ্যশ্রমকেই শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। কারণ ভিক্ষাজীবী, ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী সকলেই গৃহস্থের ওপর নির্ভরশীল। গৃহস্থ তর্পণ দ্বারা পিতৃগণের, যজ্ঞ দ্বারা দেবগণের, অন্ন দ্বারা অতিথিগণের, বেদাধ্যয়ন দ্বারা মুনিগণের, অপত্যোৎপাদন দ্বারা প্রজাপতির, বলিকর্ম বা আনুষ্ঠানিক ভোজ্যদ্রব্য দান দ্বারা প্রাণিগণের এবং বাৎসল্য দ্বারা সমস্ত জগতের সন্তোষ বিধান করে থাকে। একমাত্র ব্রাহ্মণই চারটি আশ্রমের অধিকারী। ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য প্রথম তিনটিতে (মতান্তরে প্রথম দুটিতে) এবং শূদ্র কেবল গার্হস্থ্যশ্রমের অধিকারী।
প্রাচীনকালে অবশ্য ‘আশ্রম’ শব্দের আরও ব্যাপক অর্থ ছিল। তখন ‘আশ্রম’ বলতে সংসার-ত্যাগীদের আবাসস্থল এবং সাধনা বা শাস্ত্রচর্চার কেন্দ্রকেও বোঝাত। মুনি-ঋষিরা সেখানে সপরিবার বসবাস করতেন। আশ্রমগুলি তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহূত হতো। সেখানে এক বা একাধিক গুরু থাকতেন এবং তাঁরা ছাত্রদের রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, শাস্ত্র, সাহিত্য, ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থাই ছিল তখন আশ্রমভিত্তিক। নির্দিষ্ট একটি বয়সে পিতা-মাতা সন্তানদের আশ্রমে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা সেখানে থেকেই লেখাপড়া শিখত। বিদ্যার্জন শেষ হলে ছাত্ররা স্নান করে এসে গুরুকে প্রণাম করত। গুরু তখন তাদের আশীর্বাদ করে অধীত বিদ্যা যথার্থভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিতেন। ছাত্ররা এ বিশেষ দিনে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান করে আসার পর তাদের বলা হতো স্নাতক, যা বর্তমানে ইংরেজি Graduation শব্দের বাংলা পরিভাষা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে; আর গুরু কর্তৃক ছাত্রদের এ বিশেষ আশীর্বাদ অনুষ্ঠানের নাম ছিল সমাবর্তন, যা বর্তমানে ইংরেজি Convocation শব্দের বাংলা অর্থ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।
এই আশ্রমগুলির ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজা বহন করতেন, কিংবা রাজপ্রদত্ত ভূসম্পত্তি ও গোসম্পত্তি থেকে আহূত সম্পদের মাধ্যমে মেটানো হতো। কোনো কোনো আশ্রমের ছাত্ররা গুরুর নির্দেশ অনুযায়ী গৃহস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে আনত এবং তার মাধ্যমে তাদের অন্নসংস্থান হতো। উল্লেখ্য, প্রাচীন ভারতের এ আশ্রমভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর শান্তিনিকেতন বিদ্যাশ্রম প্রথম শুরু করেছিলেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস